রমজানে ইফতার ও সেহরির ফজিলত কি কি


আসসালামু আলাইকুম। আপনারা জানতে চেয়েছিলেন রমজানে ইফতার ও সেহরির ফজিলত কি কি। আশা করছি আজকে আমরা রমজানের ইফতার ও সেহেরির ফজিলত কি কি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। রোজার অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইফতার ও সেহেরী। আপনি যদি রমজানে ইফতার ও সেহেরির ফজিল কি কি এই সম্পর্কে জানতে চান তবে নিজের পোষ্টটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন ।

রমজানে ইফতার ও সেহরির ফজিলত কি



রমজান মাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হচ্ছে একটি হচ্ছে ইফতার দ্বিতীয়টি হচ্ছে সেহরি। এই দুইটি বিষয় ছাড়া রোজা হতে পারে না এই পোস্টে আমরা ইফতারের ফজিলত, রোজার ফজিলত, সেহরি খাওয়ার সময় কখন, সেহরি খাওয়ার উপকারিতা ও ইফতার খাওয়ার বরকত কি কি তাই নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করব।

ভূমিকা

ইসলামে বারটি মাসের মধ্যে রমজান সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। তাছাড়া এই মাসে সবথেকে বেশি বরকত পাওয়া যায়। এই রমজান মাসে রোজা পালনের জন্য তাগিদ করা হয়েছে মুসলমানদেরকে।এই মাসে ৩০ টি বা একমাস রোজা এখন কথা বলা হয়েছে। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও রমজান মাসে রোজা রাখতেন এবং তার সাহাবীদের কেউ রোজা রাখার তাগিদ করতেন। 


রমজান মাস এমনই একটা বরকতময় মাস যা অন্য সব মাঝ থেকে আলাদা। এই মাসের সাওম পালন করতে হয়। শাওম শব্দের অর্থ হচ্ছে রোজা বা বিরত থাকা।আর এই রোজার ভেতরে রয়েছে সেহরি এবং ইফতার । নির্দিষ্ট একটা সময় থেকে অন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কিছু কিছু নিয়মকানুন থেকে বিরত থাকাকেই বলা হয় রোজা। রোজা রাখতে হয় শোবে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সারাদিন না খেয়ে থাকা বা বিরত থাকা এই সিয়াম বলে। আর এই সিয়ামের শুরু কে বলা হয় সেহেরী আর শেষ কে বলা হয় ইফতার।

সেহরি খাওয়ার বরকত কি

সিয়াম রাখতে হলে সেহেরি দিয়েই শুরু করতে হয়। আমরা অনেকেই জানিনা যে সেহেরি কি জিনিস বা সেহরি খাওয়ার বরকত কি? আমরা যদি সেহরি খাওয়ার বরকত কি সেই সম্পর্কে জানতাম তাহলে সেহরি খাওয়া কোন দিন বাদ দিতাম না। আসলে আমরা শুভেচ্ছা দিকে যে খাবারটা খাই সিয়াম পালনের জন্য তাকেই বলা হয় সেহরি। 

সেহরি একটু বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ সুন্নত। নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন যে 'তোমরা সেহরি খাও কেননা সেহরিতে আছে বরকত।' রোজা রাখার জন্য সেহরি খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেহরি না খেলেও রোজা পালন করা যায়। রোজা রাখার জন্য সেহরি গুরুত্বপূর্ণ কারণ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন সেহরিতে অধিক বরকত রয়েছে।

সেহরির বরকতের কথা বলতে গেলে নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম আরও বলেছেন যে 'তোমরা সেহরি খাও যদি ও তাই এক ঢোক পানীয় হয়'।তাছাড়া অন্যান্য বর্ণনায় এসেছে যে 'তোমরা সেহরি খাও যদি এক লোকমা খাদ্য ও হয় '।ইচ্ছাকৃতভাবে সেহরি বর্জন করলে তার সুন্নতের খেলাফ হয়।

সেহরি খাওয়ার সময় কখন

সেহেরী তাকে বলা হয় যখন আমরা সিয়াম শুরু করি যেই খাবারটা দিয়ে তাকে সেহেরি বলা হয়। সেহরি খাওয়ার সময় কখন তা নিয়ে অনেকেই আলোচনা করে থাকেন । কিন্তু অনেকেই জানে না যে সেহরি খাওয়ার সময় কখন । তবে এই সেহরি খাওয়ার নির্দিষ্ট একটা সময় আছে। মোল্লা আলী কারী (রাঃ) বলেন 'অর্ধ রাত্রি হতে সেহরির সময় শুরু হয় '(মিরকাত, মিশকাত)। 

সেহরির সময় জানাতে ফকিহ আবুল লাইস সমরকন্দি (রঃ) বলেন 'সেহরির সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশে '।তবে সারিস বিলম্বে খাওয়ার সুন্নত। তবে সন্ধের সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা যাবে না তার আগেই অনাহার শেষ করতে হবে। বর্তমান সময়ে ফজরের আজানের আগেই সেহরি খাওয়া শেষ করতে হবে। বর্তমানে সময় দেখা যায় যে সেহরি খাওয়ার জন্য নতুন করে আযান দেয়া হয় এবং মানুষকে জাগানো হয় এবং ফজরের আযানের আগেই সেহরি খাওয়ার দাওয়াত দেওয়া হয়। বর্তমানে সময়ের ফজরের আযানের আগেই সেহরি খাওয়ার সময়। 

সেহেরী রোজা রাখাস জন্য সহায়ক। সেহরির সময় জাগ্রত হওয়া রোজার প্রতি আগ্রহের প্রকাশ। যারা সেহরি খেয়ে রোজা রাখেন তাদের আল্লাহর নৈকট লালের সুযোগ হয়। এ সময় আল্লাহর রহমত নাযিলের সময়, সময় এই সময়ে আল্লাহ প্রেমিকদের দোয়া কবুলের সময় এবং পাশাপাশি আল্লাহর নৈকট লাভের সময়।

সেহরির ফজিলত কি কি

রমজান মাসের সেহরি খাওয়ার বরকত ফজিলত অনেক বেশি।মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন 'সেহেরী বরকতময় আল্লাহ তোমাদের যা দান করেছেন তা তোমরা ত্যাগ করো না '। রমজান মাসে কোন ব্যক্তি যদি নিয়মিত সেহরি না খাই তবে অত্যন্ত ক্লান্ত শান্ত অবসন্ন হয়ে পড়তে পারে।হলে পরের দিন রোজা রাখার সাহস হারিয়ে ফেলে। 

অন্যদিকে কোন ব্যক্তি যদি নিয়মিত সেহরি খেয়ে রোজা রাখার চেষ্টা করে তবে সে শারীরিক ও মানসিক ভাবে মজবুত থাকে । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেহরি ও ইফতারের সময়সীমা নির্ধারণ করে রোজা কে সহজ করে দিয়েছেন। তাই রোজাদারদের নিয়মিত সেহরি খাওয়া প্রয়োজন। এরমধ্যে সেহরি খাওয়ার উপকারিতা ও গুরুত্ব ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয় । কোন ব্যক্তি যদি মনে করে সেহরি না খেয়েই রোজা রাখবেন তবে পারবেন কিন্তু সেহরি খেয়ে রোজা রাখার গুরুত্ব অনেক।

ইফতারের ফজিলত কি

সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখার পরে ইফতারের সময় হয়। ইফতারের সময় হওয়া মাত্রই ইফতার করা উত্তম। ইফতারের আগেই ইফতারির সামনে নিয়ে বসে থাকা সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত আছে যে কোন রোজাদারদের দোয়া আল্লাহ এতই কবুল করে যে বা আকর্ষণীয় লাগে যে আল্লাহ ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন যে 'রমজানে তোমাদের পূর্বের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তা হল আমার রোজাদারগণ আর যখন দোয়া করবে তোমরা তখন আমিন করবে'।


আর রমজান মাসে ইফতারের ফজিলত কি তা আমরা রমজান আসলে বুঝতে পারি। ইফতারের সময় খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত।

ইফতার করানোর ফজিলত কি

রমজান মাসে ইফতার করা যেমন ফজিলতের কাজ ঠিক তেমনি অন্যকে ইফতার করানো ও ফজিলতের কাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন 'যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে সে জাহান্নামে মুক্তি লাভ করবে এবং রোজাদারদের সবের সমপরিমাণ সব লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারদের সব কম করা হবে না '।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম আরও বলেন যে 'কোন ব্যক্তি যদি কোন রোজাদারকে এক পেয়ালা দুধ বা একটি খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা কেউ কোন রোজাদারকে ইফতার করাই তবে সেই সমপরিমাণ সব সে পাবে। আর কোন ব্যক্তি যদি কোন রোজাদারকে তৃপ্তি সহকারে আহার করাবে আল্লাহ তাআলা তাকে আমার হাউজে কাউসার থেকে এমন পানিও পান করাবেন যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না '(মুসনাদে আহমাদ)
ইত্যাদি ইফতার করা বা ইফতার করানো দুইটি সবের 

ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়

কাজ। কোরআন হাদিসে উল্লেখ আছে যে ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়। ইফতারের সময় দোয়া করা উত্তম তবে নিজের ভাষায় দোয়া করলে ও হয়। ইফতারের সময় বিভিন্ন রকম দোয়া করতে পারেন আবার আপনার জীবনের যত চাহিদা আছে আপনি চাইতে পারেন নি তার সামনে নিয়ে। ইফতারের আগে এই দোয়া পড়তে পারেন 'আল্লাহুম্মা লাকা শুমতু ওয়ালা রিজকিকা আফতারতু' যার অর্থ -হে আল্লাহ আপনার জন্য আমি রোজা রেখেছি। আপনার রিজিক দ্বারা ইফতার করছি (আবু দাউদ)

ইফতার করার সময় কখন

আল্লাহর সন্তুষ্টি মুমিনদের জীবনের প্রধান লক্ষ্য। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই সারাদিন সিয়াম পালন করা। ইফতার করার সময়ই এই নিয়ে অনেক আলোচনা রয়েছে।তবে ইফতার করার প্রধান সময় হচ্ছে যখন সূর্যাস্ত যাবে তার সাথে সাথেই ইফতার করানো উচিত। অর্থাৎ আপনি যেই জায়গায় অবস্থান করছেন সেই জায়গা থেকেই যখন সূর্য অস্ত যাবে তখন সেই জায়গায় ইফতার করানো উত্তম। 

তবে সঠিক সময়ে ইফতার করা উচিত। অর্থাৎ ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করা উত্তম। সারাদিন রোজা রাখার পরে ইফতার করার সময় আসে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন -রোজাদারদের জন্য দুইটি খুশি, একটি ইফতারের সময় অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। (সহিহ বুখারি)

লেখকের শেষ মন্তব্য

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ তার মধ্যে সিয়াম পালন করা অন্যতম। যাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে তাদের জন্য রোজা পালন করা অবশ্যই করণীয়। যদি কোন সমস্যার কারণে রোজা করতে না পারা যায় তবে তার জন্য রোজা মওকুফ তবে যারা অসুস্থ নয় তাদের জন্য রোজা ফরজ। রমজান মাসে ইফতার খাওয়ার ফজিলত অনেক বেশি। 

পাশাপাশি রমজান মাসে ইফতার করানোর ফজিলত অনেক বেশি। সেহরি খাওয়া বা সেহরি খাওয়ার নিয়ম সময় জানা উচিত। তবে আমরা নবীজির সুন্নাত অনুযায়ী সিয়াম পালন করার চেষ্টা করি। সেহরি ও ইফতার ও অধিক বরকতময়। আমরা সেহরি বা ইফতার নিজে করি এবং অপরকে করানোর চেষ্টা করি।


উপরের পোস্টটি পরে যদি আপনার কোন উপকার হয় তাহলে আমার ওয়েবসাইটটি লাইক করুন সাবস্ক্রাইব করুন ফলো করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর কে আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url