যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য কি
আসসালামু আলাইকুম। যাকাত ও ফিতরা ইসলামেরএকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনারা জানতে চেয়েছিলেন যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য কি। আজকে আমরা যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য কি সেই নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করব। যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য কি তা সম্পর্কে জানতে হলে নিচের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভ রয়েছে। তার মধ্যে যাকাত অন্যতম। ডাকাতের পাশাপাশি ফিতরা কেন দিতে হয়, ফিতরা কাদের উপর ফরজ, বা ফিতরা কখন আদায় করতে হয় এই নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করব।
ভূমিকা
যাকাত সবার জন্য ফরজ নয় কিন্তু ফিতরা সবার জন্যই ফরজ। এমনকি বাচ্চাদেরও ফিতরা দেয়া লাগে। একদিন বয়সের বাচ্চা হলেও তার ফিতরা দেওয়া উচিত। ইসলামের দৃষ্টিতে যাকাত আদায় করা ফরজ। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।শুধু মুসলমানদের উপর এই যাকাত ফিতরা ফরজ করা হয়েছে । রমজান মাসের রোজা পালন করতে হয় এই রোজা পালনে ভুলত্রুটির কারণেই ফিতরা দেয়া প্রয়োজন হয়।
আরো পড়ুনঃ যে কারনে রমজান মাসের গুরুত্ব
পাশাপাশি যাদের যাকাতের সমান অর্থ রয়েছে তাদের জন্য যাকাত ফরজ করা হয়েছে। তবে সবার জন্য যাকাত ফরজ নয়। যাকাত বা ফিতরের টাকা সবার মাঝে বিলিয়ে দেয়া ঠিক না। নির্দিষ্ট কিছু মানুষজন আছে তাদের মাঝে যাকাত ফিতরা টাকা বিলিয়ে দেয়া উচিত।
ফিতরা কখন আদায় করতে হয়
ইসলামের রীতিনীতি অনুযায়ী প্রতিটি মুসলমানের কাছ থেকে ফিতরা নেয়া উচিত। ফিতরা কখন আদায় করতে হয় এই সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। আবার অনেকে আছি ফিতরা কখন আদায় করতে হয় এই সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি না। তখনই আদায় করতে হয় ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সময় হয়। ফিতর মানেই হচ্ছে রোজা ছাড়া। এই ঈদুল ফিতরের এর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ফিতরা দেয়া যায়। প্রতিটি মুসলমানদের জন্য আলাদা আলাদা ফিতরা প্রদান করতে হয়। এক কথায় ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে দিলেই হলো।
ফিতরা কেন দিতে হয়
ইসলামের দৃষ্টিতে ফিতরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। আসুন জানি আমরা ফিতরা কেন দিতে। হয় যাদের বয়স এক ঘণ্টা বা ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই ভুমিষ্ট হয়েছে তাদেরও পিতারা দেওয়া দরকার বা ফরজ। ফিতরা মানে হল প্রকৃতি। রমজান মাসে ৩০ টি রোজা পালন করতে হয়। এই রোজা পালনে বিভিন্ন রকম ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে এই ভুলত্রুটি থেকে আত্মশুদ্ধি লাভ করার জন্য
অসহায়দের মাঝে কিছু অর্থ সম্পদ দেয়া বা দান করার মাধ্যমটাকেই বলা হয় ফিতরা। রমজান মাসে রোজা পালনের সময় অনেক সময় আমরা বিভিন্ন রকম ভুল ত্রুটি করে থাকি। আর সেই ভুলত্রুটিগুলো সংশোধন করার জন্য আমাদের ফিতরা দিতে হয়। প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ফিতরা হিসেবে দান করতে হয় ।
ফিতরা কাদের উপর ওয়াজিব
ফিতরা কাজ দিতে হয় আমরা তো অনেকেই জানিনা। ইসলামের দৃষ্টিতে ফিতরা সবাইকে দেয়া উচিত না। এটি অসহায় দুর্বলদের হক। কোন ধনবান ব্যক্তি এই ফিতরার টাকা বা অর্থ নিতে পারেনা। সমাজে কিছু কিছু অসহায় লোক আছে তাদের জন্য ফিতরার টাকা বা অর্থ বিলিয়ে দেয়া প্রয়োজন। ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। প্রত্যেক গোলাম, ধনী-গরীব,নারী-পুরুষ, ছোট বড়, স্বাধীন পরাধীনসব মানুষের জন্যই ফিতরা ওয়াজিব করা হয়েছে।
আদায়কৃত ফিতরার অর্থ কাদের দেয়ার নিয়ম
সব ধরনের মানুষকে ফিতরা টাকা দেয়া ঠিক না। কিছু কিছু মানুষ আছে তাদের জন্য ফিতরার টাকা দেয়া প্রয়োজন। সমাজে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বাস করে তার মধ্যে কিছু কিছু মানুষ অসহায় দারিদ্রতার মাঝেও বাস করে সেইসব মানুষ গুলোকে খুঁজে খুঁজে বের করে ফিতরার টাকা দেয়া উচিত। আমাদের সমাজের মানুষ অনেকেই জানে না ফিতরা টাকা কাদের মাঝে দেওয়া উচিত। আসুন আমরা জেনে নিয়ে ফিতরার টাকা বা অর্থ কাদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া উচিত।
ফকিরঃ যারা জীবন ধারণের জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল। নিজের প্রয়োজন মত অর্থ উপাদান উপার্জন করতে পারেনা অন্যের উপর নির্ভর করে তাদের সংসার চলে তাদেরকেই ফকির বলা হয়ঠিক তারাই ফিতরার টাকা বা অর্থ পেতে পারে।
মিসকিনঃ কোন ব্যক্তির অর্থ দিয়ে তা দিয়ে যদি তার পরিবার কিংবা তার ওপর নির্ভরশীল মানুষদের প্রয়োজন পূরণ না হয় তাকেই মিসকিন বলা হয়। এই ধরনের লোক মূলত চেনা যায় না তাদের খুঁজে বের করে ফিতরের টাকা দিতে হয়।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিঃ সমাজে দেখা যায় অনেক সময় অনেক মানুষ ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ে। একটার পর একটা ঋণে জর্জরিত হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে এমন ব্যক্তি ফিতরা পাওয়ার যোগ্য।
মুসাফির জন্যঃ নিজস্ব আবাসস্থল আছে বা সংবাদ আছে এমন ব্যক্তি যদি সফরে গিয়ে বিপদগ্রস্ত হয় বা নিঃস্ব হয়ে যায় তবে তাকে সাহায্য করার জন্য ফিতরার টাকা দেয়া প্রয়োজন ।
আল্লাহর পথে খরচের জন্যঃ বিভিন্ন ধরনের কাজ যেমন আল্লাহর পথে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কিংবা সমাজের উন্নতির জন্য কিছু অর্থ ফিতরা থেকে প্রদান করা হয়।
আরো পড়ুনঃ ইফতার ও সেহরির ফজিলত কি কি
অসহায় আত্মীয়স্বজনঃ আমাদের সমাজের ব্রা আশেপাশের কিছু আত্মীয়স্বজন আছে তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ থাকলে তাদের ফিতরার অর্থ দেয়া প্রয়োজন। ফিতরার থেকেই এদেরও হক রয়েছে।
যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য
ইসলামের যাকাত ও ফিতরা দুইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে যাকাত ও ফিতরার সাথে অর্থের একটা মিল রয়েছে। যাকাত ও ফিতরার মধ্যেও পার্থক্য অনেক রয়েছে আবার অনেক মিলও রয়েছে। আমরা অনেকেই যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাই না। যাকাতও ফিতরার মধ্যে পার্থক্যগুলা জেনে নিই।
অর্থ গত: যাকাত মানে হচ্ছে পবিত্রতা বা বৃদ্ধি করা। আর কি তোর বাপ হাতুর শব্দের অর্থ সকালের খাদ্যদ্রব্য বা যা দ্বারা রোজাদারগণ করে থাকেন।
শর্তগতঃ কোন ব্যক্তির মালিকানাই নিসব পরিমাণ সম্পদে এক বছর পূর্ণ হলেই তাকে সম্পদের ২.৫ শতাংশ হারে যাকাত প্রদান করতে হয়। অপরদিকে ফিতরার কোন হিসাব পরিমান সম্পদ থাকতে হয় না। কোন একজন ব্যক্তি হলেই হল। ঈদুল ফিতরের দিন সকাল পর্যন্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার উপর ফিতরা খরচ করা হয়েছে।
উদ্দেশ্য গতঃ যাকাতের মাধ্যমে যে কাতের মাধ্যমে কোন ব্যক্তির অর্জিত সম্পদ পবিত্রতা রক্ষা পায়। অপরের দিকে ফিতরা রমজান মাসে রোজাদারদের ভুল ত্রুটির কাফফারা স্বরূপ প্রদান করা হয়।
পরিমাণগতঃ যাকাতের পরিমাণ হচ্ছে চল্লিশ ভাগের একভাগ বা ১০০ ভাগে আড়াই ভাগ। অপরদিকে ফিতরা প্রদান করতে হয় এক' ছা' যার পরিমাণ গম ২ কেজি 40 গ্রাম প্রায় চালফরাই আড়াই কেজির সমান।
প্রদান করার খাতঃ যাকাত প্রদানের আর একটি খাত রয়েছে। অন্যদিকে ফিতরা বেশিরভাগ আলেমদের মতে শুধুমাত্র গরিব অসহায় ও দুস্থ লোকদের মাঝে বিতরণ করা উচিত।
ইবাদতের ক্ষেত্রেঃ যাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। যার অর্থ সম্পদ রয়েছে তার জন্য ফরজ। অপরের দিকে ফিতরা একটি অজিত ইবাদত।
লেখকের শেষ মন্তব্য
পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মূল স্তম্ভ রয়েছে তার মধ্যে যাকাত 5 নম্বরে আছে।আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ের জন্য আমরা ঠিকমতো ফিতরা দেই যাকাত আদায় করার চেষ্টা করি। উপরে আলোচনার দ্বারা ফিতরা কেন দিতে হয় ফিতরা কাদের উপর ফরজ ফিতরা কখনো আদায় করতে হয় যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য কি তা ভালো মত জেনে ফেললাম।
আশা করছি উপরে আলোচনা মোতাবেক আমরা যাকাত ও ফিতরা আদায় করবো এবং মানুষ গরিব দুস্থদের মাঝে বিলিয়ে দেব। ইসলামের রীতিনীতি অনুযায়ী মেনে চললে সমাজের কেউ গরিব অসহায় থাকবে না ইনশাল্লাহ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর রীতিনীতি অনুযায়ী ফিতরা আদায় করি এবং দেয়ার চেষ্টা করি। তবে আসুন আমরা সবাই সব মুসলমান গনি ইসলামের সঠিক নিয়ম নীতি মেনে চলি এবং মহান আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।
আরো পড়ুনঃ কি কি কারণে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যায়
উপরের পোস্টটি পড়ে যদি আপনার কোন উপকার হয় তবে আমার ওয়েবসাইট ফলো করুন সাবস্ক্রাইব করুন ধন্যবাদ।
আর কে আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url