পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর আনন্দ
আসসালামু আলাইকুম। আপনি কি জানতে চাইছেন পবিত্র-ঈদ-ফিতর এর আনন্দ সম্পর্কে। তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকে আমরা পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর আনন্দ সম্পর্কে ব্যাপকভাবে আলোচনা করব। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ সম্পর্কে জানতে হলে নিচের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রত্যেকটি মুসলমানদের জীবনে ঈদ প্রচুর আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে।আজকে এই পোস্টে পবিত্র ঈদুল ফিতরে আমরা কি করব, পবিত্র ঈদ-উল ফিতর কেন পালিত হয়, ঈদ-উল-ফিতর শব্দের অর্থ কি এই নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করব।
ভূমিকা
ঈদ একটি আরবি শব্দ। যার অর্থই হচ্ছে ফিরে আসা। যার বাংলা অর্থ খুশি আনন্দ। আর ফিতরা হচ্ছে রোজা ভাঙ্গা বাপ কি তোর শব্দের অর্থ হলো রোজা ভাঙ্গা। মুসলমানদের জীবনে দুইটি ঈদ পালন করা হয়ে থাকে। এই ঈদ ধনী গরিব সবার মাঝে আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ঈদ উল ফিতর অন্যটি হচ্ছে ঈদুল আযহা। ঈদুল ফিতর এর অর্থ হচ্ছে ঈদ অর্থ উৎসব আর ভিতর অর্থ হচ্ছে রোজা ভঙ্গ করুন উৎসব।
আরো পড়ুনঃ যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য কি
অন্যটি হচ্ছে ঈদুল আযহা এখানে আযহা শব্দের অর্থ হচ্ছে উৎসর্গ করা বা জবেহ করা। তবে মুসলমানদের জীবনে এই দুইটা ঈদ খুব বেশি খুশি বলে নিয়ে আসে।ঐতিহাসিক দিক থেকে দেখা যায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সময় ঈদুল ফিতর পালন করা হতো। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের পর মদিনায় এই উৎসবের সূচনা করেছেন। এই ঈদুল ফিতরের সময় বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ধরনের আচরণ অনুষ্ঠান পালন করে থাকি।
ঈদ-উল-ফিতর শব্দের অর্থ কি
ঈদ মানে খুশি ঈদ মানে আনন্দ এটা আমরা সবাই জানি। তবে ঈদ-উল-ফিতর মানে কি তা সবাই সঠিকভাবে জানিনা অনেক সময় জানারও চেষ্টা করে না। আসুন আমরা ঈদ-উল-ফিতর সম্পর্কে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করি। ইসলামিক বিষয়ে প্রত্যেক মুসলমানদের জ্ঞান থাকা আবশ্যক। বয়সে ছোট-বড় সবার জন্য ইসলামিক জ্ঞান আহরণ করা প্রয়োজন। বর্তমান সমাজে মনে করা হয় ইসলাম শিক্ষা মানেই অধঃপতনের শিক্ষা।
ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে প্রত্যাবর্তন অর্থাৎ পুনরায় আগমন। আর ফিতর শব্দের অর্থ হচ্ছে ভঙ্গ করন বা রোজা ভঙ্গ করা। অর্থাৎ সাধারণভাবে বলা যায় ঈদ-উল-ফিতর শব্দের অর্থ কি দাঁড়ালো রোজা ভাঙ্গার উৎসব। পরিভাষায় ঈদ অর্থ উৎসব বা পর্ব। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে তার মধ্যে রোজা অন্যতম। রমজান মাসে এক মাস রোজা রাখার পরেই সেই রোজাকে ভাঙ্গার জন্য ঈদুল ফিতর এর আয়োজন করা হয়।
ঈদুল ফিতরে আমরা কি করব
ঈদ মানে খুশি ঈদ মানে আনন্দ এই খুশির ঠেলায় অনেকেই বুঝতে পারি নাই ঈদুল ফিতরে আমরা কি করব। অনেকেই চিন্তা করে মাথা খারাপ করে ফেলে ঈদুল ফিতরে কি করা যায়। ঈদুল ফিতর এর যাবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ফিতরা আদায় করতে হয়। আর এই ফিতরা আদায় করার কারণ হচ্ছে রোজা পালন করার সময় কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটলে রোজার ভারসাম্য রক্ষা ক্ষেত্রে ঈদুল ফিতরের যাওয়ার আগ মুহূর্তে ফিতরা প্রদান করতে হয়। অর্থাৎ রোজার ভুলভ্রান্তি গুলো দূর করতে ছোট ছোট ভুল ভ্রান্তি গুলো দূর করতে ফিতরা আদায় করতে হয়। ঈদুল ফিতরের যাবার সময় ফিতরা আদায় করে যেতে হয়।
- ঈদুল ফিতরের যাবার সময় কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে যেতে হয়।
- ঈদুল ফিতরের যাওয়ার সময় আপনি চাইলে সবাইকে সালাম দিতে পারেন এবং সালাম দিতে পারেন।
- ঈদুল ফিতরে যাওয়ার দিন খাওয়ার খেয়ে যাওয়া সুন্নত।
- ঈদুল ফিতরের দিন দুই রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজ আদায় করতে হয়।
- ঈদের দিন বেশি বেশি দান খয়রাত করতে হয়।
- ঈদুল ফিতরের দিন সবার সাথে ভালো ব্যবহার এবং হাসিমুখে কথা বলতে হয়।
- ঈদুল ফিতরের দিন কারো সাথে সম্পর্ক খারাপ থাকলে হাসিমুখে কথা বলে তার সাথে সম্পর্ক ঠিক করে নিতে পারেন।
- ঈদুল ফিতরের যাবার আগের দিন সন্ধ্যায় থেকে তাকবীর পড়তে হয়। এমনকি ঈদুল ফিতরের যাবার সময়ও তাকবীর পড়তে হয়।
- ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে বাড়ি কিছু ভালো খাবার দাবার আয়োজন করতে পারেন।
- ঈদুল ফিতরের দিন নামাজ শেষে আপনার বন্ধু বান্ধবীদের দাঁত দিয়ে খাওয়াতে পারেন।
- ঈদ মানে খুশি ঈদ মানে আনন্দ তাই আপনি ঈদুল ফিতরের দিন যত খুশি আনন্দ করতে পারেন।
- ঈদুল ফিতরের নামাজ কিভাবে পড়বো
ঈদুল ফিতরের নামাজ শুনাতে মুয়াক্কাদা। জুমার নামাজ এর সময় খুতবা আগে দেয়া হয় কিন্তু ঈদের সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজ এ খুতবা পরে দেয়া হয়। নামাজ দুই রাকাতে পালন করা হয়। এই সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজে কোন আযান দেয়া হয় না। আজানের প্রয়োজন হয় না। প্রথম রাকাতে সাত তাকবীর দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাচ তাকবীর দেয়া হয়। অর্থাৎ প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় রাকাতে চারটি অতিরিক্ত তাকবীর দেয়া হয়। এবং নামাজ শেষে ইমাম খুতবা পাঠ করতে শুরু করেন। এই নামাজ শেষে ধনী গরিব সবাই মিলে খোলাখুলি গোসল বিনিময় করতে ভালোবাসেন। এছাড়াও এই দিনে আত্মীয়-স্বজন বা পূর্ণবন্দের কবর জিয়ারত ও কেউ কেউ করে থাকে।
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর কেন পালিত হয়
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর কেন পালিত হয় এই সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। ইসলাম সম্পর্কে অনেকেরই পরিপূর্ণ ধারণা নেই। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর আমরা পালন করে থাকি এই সম্পর্কে বা কেন পালিত হয় তা অনেকেই জানিনা। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরতের পরপরই ঈদ-উল-ফিতর এর উৎসব পালন শুরু হয়।
হযরত আনাস (রাঃ) একটি হাদিসে বর্ণনা করেন যে -মদিনায় এসে জানলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা বাসি বছরে দুটি দিনে আনন্দ উল্লাস করে থাকে। জিজ্ঞাসা করে আরো জানালেন,ইসলাম পূর্ব যুগ থেকেই এই দুটি দিনকে তারা উৎসবের দিন হিসেবে পালন করে।
আরো পড়ুনঃ রমজানে ইফতার ও সেহরির ফজিলত কি কি
তখন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেন -আল্লাহ তোমাদের এই দুইটি দিনের বদলে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন আর সেই দুটি দিন হল ঈদ উল আযহা এবং ঈদুল ফিতর। এই দুইটি দিনই ইসলামে সব থেকে বেশি খুশির দিন হিসাবে পালিত হয়।
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর আনন্দ
ইসলামের দৃষ্টিতে ছোট বড় সবাই আনন্দের থাকার চেষ্টা করেও আনন্দ করবে ঈদের দিনে। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর আনন্দ যে কোন মুসলমানদের জন্য সুশান্তি বয়ে নিয়ে আসে। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর আনন্দ সবার ঘরে ঘরে আল্লাহ ছড়িয়ে দেন। বিভিন্ন খাবার দাবার মাধ্যমে হোক বা আত্মীয় স্বজনদের সাথে ভালো ব্যবহার করে হোক অথবা যে কোন উপায় হোক ঈদের আনন্দ সবার মাঝে একটু না একটু থাকবেই।
রমজানে একটি মাস রোজা রাখার শেষে ঈদুল ফিতর ব্যাপক আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে। তবে দেখা যায় ছোট ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এই আনন্দ বেশি দেখা যায়। অনেক সময় বড়দের মাঝেও এই আনন্দ বেশি দেখা যায়। অনেকে আবার এই পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর আনন্দ উপভোগ করে আবার অন্যের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসে।
ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদের দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ এবং এই দিনে একটি নির্দিষ্ট প্রার্থনা মনোনীত করা হয়েছে। অনেকে আবার এই পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর আনন্দ কিছু গরীব মানুষদের দান করে পেয়ে থাকে।পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় স্কুল কলেজ অফিস ছুটি থাকাই সবাই আনন্দ উপভোগ করতে পারে। তার পাশাপাশি অনেকেই নতুন জামা পাওয়ার কারণেও আনন্দ উপভোগ করে থাকে।
লেখক এর শেষ মন্তব্য
মুসলিম ঐতিহ্য অনেক অনুসারে এই ঈদের সূত্রপাত হয়েছিল মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমেই। তিনি এই দুইটি ঈদ সম্পর্কে ধারণা দেন। ঈদে কি কিভাবে পালন করা যায় কি কাজ করলে ভালো হয়, পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর আনন্দ সম্পর্কে ধারণা দেন। প্রত্যেক মানুষের স্বাধীন। তবে যে যার মতো করে ঈদ-উল-ফিতর পালন করতে পারে।
ইচ্ছে করলে কেউ নামাজ পড়তেও পারে আবার কেউ নাও করতে পারে। আবার কেউ বেশি আনন্দ করতে পারে আবার কেউ নাও করতে পারে। তবে ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী এই পবিত্র দিনে আনন্দ করা সবার জন্যই তাইতো বা কর্তব্য। আশা করছি আপনারা সবাই নিজেদের মধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ কি কি কারণে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যায়
উপরের পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে বা উপকার হয় তবে আমার ওয়েবসাইটটি লাইক করুন সাবস্ক্রাইব করুন পারলে ফলো দিয়ে রাখুন ধন্যবাদ।
আর কে আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url